খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।
খাগড়াছড়িতে হিন্দু – মুসলিম, পাহাড়ি-বাঙালির সম্মিলিত বসবাস। এখানে ধর্মীয় কিংবা অন্য কোনো উৎসব মানে সবার সমান অংশগ্রহণ। আর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ পুজা পাহাড়ে পরিণত হয় সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণের মানুষের এক মিলনমেলায়।
এবারে খাগড়াছড়িতে ৫৭টি পুজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পাহাড়ে বসবাসরত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী হওয়ায় তারাও সমানভাবে উদযাপন করছেন শারদীয় দুর্গা উৎসব। আর এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি মন্দিরে দেবী দুর্গাকে সাজানো হয়েছে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই-রিসা, চন্দ্রাহার সহ বিবিধ অলংকারের সাজে।
খাগড়াছড়ির সদরস্ত খাগড়াপুর এলাকায় শ্রীশ্রী অখণ্ডমণ্ডলী পূজামণ্ডপ এ গিয়ে দেখা যায় দেবী দূর্গাকে সাজানো হয়েছে সনাতনী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই-রিসা,চন্দ্রাসহ বিবিধ অলংকারে।
দেবীর ডান পাশে লক্ষ্মী ও কার্তিক, বামে সরস্বতী ও গণেশ। তাদের পরনেও ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর অলংকার। দেখেই মনে হবে যেন স্বয়ং দেবী দূর্গা এসে বসে আছেন সন্তানদের নিয়ে। প্রতিমার সঙ্গে মিলিয়ে
মঞ্চসজ্জা আর মণ্ডপে প্রবেশ পর্যন্ত সবকিছুই পাহাড়ে ত্রিপুরাদের সংস্কৃতির আদলে সাজিয়েছেন শিল্পীরা।
দেবীর গলায় মালা হিসেবে পড়ানো হয়েছে রুপার চন্দ্রাহার আর পুইসা মালা (যা পয়সা দিয়ে তৈরি বিশেষ মালা), খোঁপায় পড়ানো হয়েছে সুরাম,কালসি,কানে পড়ানো হয়েছে ‘য়াংকুং’, হাতে বাংগ্রী এবং পায়ে পড়ানো হয়েছে ‘বেংকি’। দেবী দুর্গা ছাড়াও একই সাজে সাজানো হয়েছে লক্ষী, স্বরসতী’কে।
এলাকার বাসীরা জানান,
এবার দেবী দুর্গা মা’কে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই-রিসা আর চন্দ্রাহার সহ বিবিধ অলংকারের সাজে বেশ সুন্দর লাগছে। মঞ্চ সাজসজ্জাও করা হয়েছে প্রকৃতির আদলে। সব মিলিয়ে কম্বিনেশন টা অসাধারণ।
শ্রী শ্রী অখণ্ডমণ্ডলী পুজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক চামিলী ত্রিপুরা জানান, মায়ের রূপকে এবার আমাদের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর অলংকারের সাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেবী দুর্গার পড়নে রয়েছে রিনাই-রিসা আর চন্দ্রাহার সহ নানা বিবিধ অলংকারে।
খাগড়াপুর দুর্গা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বলিন্দ্র ত্রিপুরা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় আমরা এ বছরও শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপন করতে যাচ্ছি। তবে এবার দেবী মা’কে আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই-রিসা পড়িয়ে সাজিয়েছি। সাজসজ্জাতেও আমাদের সংস্কৃতি ও পাহাড়ের রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
স্থানীয়দের মতে পূজা-পার্বণের মাধ্যমে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :