জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসুন রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ির মায়াবী ঝর্ণাগুলোতে


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ২৩/০৭/২০২৩, ১০:০৮ AM / ৫১
জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসুন রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ির মায়াবী ঝর্ণাগুলোতে

সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা।বিলাইছড়ি( রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি।

প্রকৃতির রানী বলা হয় রাঙ্গামাটিকে।প্রকৃতির সৌন্দর্য ঘেরা বিলাইছড়ি উপজেলাও।এ উপজেলার মোট আয়তন ৭৪৫.১২ বর্গকিলোমিটার মোট জনসংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজারের উপরে।ভারত ও ময়ানমার দুই দেশের সীমানা রয়েছে।রয়েছে সীমানা সড়কও। রয়েছে বিভিন্ন সম্প্রাদায়ের বসবাস। সামাজিক সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আচরন, ভিন্ন ভিন্ন পোশাক- পরিচ্ছদ, খাবার- দাবারে রয়েছে ভিন্নতা।তাদের বসবাস পাহাড়ের নীচে,নদীর ধারে, ছড়ার পারে কিংবা সুউচ্চ পাহাড়ে।রয়েছে অসংখ্য ঝর্ণাও। এজন্য বিলাইছড়ি উপজেলা তো নয় যেন এক মায়াবী স্বর্গ।তাই দেখতে জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসুন এই উপজেলায় ঝর্ণা সহ বিলাইছড়ি প্রকৃতি। প্রকৃতিপ্রেমীদের দিন দিন আকৃষ্ট হয়ে উঠছে এই ঝর্ণাগুলোতে।এগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নতুন রিসোর্ট, হোটেল – মোটেলও। হয়ে ওঠেছে সম্ভাবনাময় বিলাইছড়ি উপজেলা।

উপজেলার প্রকৃতি যেন আপনাকে ডাকছে, বলছে দেখ আমাকে কেমন লাগছে। আমিও তোমাদের সঙ্গে মিতালী করতে চাই,চাই ঘুরতেও। বন্ধু হলে হাত বাড়াও।মানুষ, হাল-বিল,নদ-নদী,পাহাড়, লেক সবকিছু যেন একসাথে অসাম্প্রদায়িক মেলবন্ধন।এবং অতিথি পরায়ণ বিলাইছড়িবাসীও। কর্ণফুলি লেক থেকেই উৎপত্তি হয়েছে ৫ টি শাখা নদী তার মধ্যে ১ টি নদী হলো রাইংখ্যং নদী।সেই নদীর উৎস হচ্ছে সু-উচ্চ পাহাড়ের ঝিঁড়ি,ঝর্ণা,ছড়া থেকে।পাহাড়ের রয়েছে শত শত ছোট-বড় অনেক ঝর্ণা।তেমনিভাবে বিলাইছড়িতে রয়েছে অনেক বড় বড় ঝর্ণাও।যেমন- নকাটাছড়া ঝর্ণা'”স্বর্গপুর ঝর্ণা, গাছকাটাছড়া ঝর্ণা,মুপ্যাছড়া ঝর্ণা এবং ধুপপানি ঝর্ণা- সহ অসংখ্য মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা । এজন্য ঝর্ণার জন্য খ্যাতও বলা যাবে বিলাইছড়ি উপজেলাকে।

প্রায় ঝর্ণাগুলো ১০০- ১৫০০ ফুট উঁচু হতে রিমঝিম রিমঝিম করে সবসময় বৃষ্টির মত পানি পড়তে থাকে। ভিজলে মূহুর্তের মধ্যেই শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়।চৈত্র মাসে খরা রোদেও কোন রকম পৌঁছাতে পারলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, ভুলে যায় ঝর্ণার পানি পরশ করলে।গ্রীষ্মকালেও তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হয়। শুভলং, হিমছড়ি, সীতাকুণ্ড এবং মাধবকুণ্ডসহ দেশের অন্যান্য ঝর্ণার চেয়েও কোন অংশে কম নয়। হার মানাবে দেশের বেশ বড় বড় ঝর্ণাকে।না দেখলে মিস, মিস,মিস করবেন। ধুপপানি ঝর্ণাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা মনে করে প্রকৃতি প্রেমীরা।

ঝর্ণা রক্ষণাবেক্ষণ কমিটিঃ- বর্তমানে ঐসব এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি “ঝর্ণা রক্ষা কমিটি” গঠন করা হয়েছে। গাছপালা কাটা হয়না বলে এই ঝর্ণা এখনো বেঁচে আছে। তাই ঝর্ণাকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি কমিটি গঠন করে পর্যটক আসলে তাদেরকে আসার জন্য সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে স্থানীয়রা।

অবস্থানঃ গাছকাটাছড়া ( গাইতকাবাছয়া) ঝর্ণা বিলাইছড়ি উপজেলায় ১ নং সদর ইউনিয়নে ৩ নং ওয়ার্ডের গাছকাটাছড়া দোসরী পাড়ায় অবস্থিত। যেতে হলে সময় লাগবে সদর থেকে প্রায় ০৮ ঘন্টা (আসা- যাওয়া)। গাইডার পাবেন।

ধুপপানি ঝর্ণাঃ- ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়নে-যেতে হলে উলুছড়ি নতুবা ওড়াছড়ি কিংবা ধুপশীল হয়ে যেতে হবে। সময় লাগবে ১০ থেকে ১১ ঘন্টা ।
মূপ্যা ছড়া ও নকাটাছড়াঃ কেংড়াছড়ি ইউনিয়নে ৯ নং ওয়ার্ডে- যেতে হলে নলছি হয়ে যেতে হবে। সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা
স্বর্গপুর ঝর্ণাঃ-বিলাইছড়িতে দীঘলছড়ি মৌন পাড়ায়- মূল সড়ক দিয়ে ধূপ্যাচর, দীঘলছড়ি হয়ে যেতে হলে -সময় লাগবে ৪ ঘন্টা।

কিভাবে আসবেনঃ–ঢাকা হতে ইউনিক, ডলফিন, শ্যামলী ও হানিফ এন্টারপ্রাইজ, বিআরটিসি কোচে করে রাঙ্গামাটির তবল ছড়ি লঞ্চ ঘাট হতে সকাল ৭ টা বেলা ২ টা নতুবা রিজার্ভ বাজার মদজিদ ঘাট হতে বেলা ৩ টায় বিলাইছড়ির পথে লঞ্চ পাওয়া যাবে।অন্যদিকে ঢাকা হতে সরাসরি কাপ্তাই হয়ে বিলাইছড়িতে ইঞ্জিন চালিত লোকেল বোটে ভাড়া নেবে জন প্রতি ১০০ -১৫০ টাকা।

তবে উল্লেখ্য যে, কাপ্তাই হয়ে গেলে লেকের বা হ্রদের পুরোদৃশ্য কোনভাবে উপভোগ করা যাবে না।উপভোগ করা যাবে রাঙ্গামাটি রিজার্ভ বাজার ঘাট নতুবা উন্নয়ন বোর্ডের ঘাট হয়ে গেলে পুরো দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। সেজন্য যোগাযোগ করতে পারেন বিলাই ছড়ি বোট মালিক সমিতির সঙ্গে। যার কনটাক্ট নাম্বার – ০১৫৫৯৭১৪৮৯৬। এতে ফোনে আগে যোগাযোগ ও দরকষাকষির মাধ্যমে লেকের দৃশ্য দেখে দেখে বা উপভোগ করে মনে আনন্দে ছন্দে যেতে পারবেন।

থাকা ও খাবার ব্যবস্থাঃ- বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে নিলাদ্রী রিসোর্ট ।এছাড়াও রয়েছে বোর্ডিং হোটেল – মোটেল।ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। সেখানে রাত্রি যাপনের পর ভোর সকাল ৮ টায় কান্ট্রি রিজার্ভ বোটে ভাড়া পড়বে মাত্র ১০০০-৩০০০ টাকা। উপজেলা রিসোর্ট থেকে দেখা মিলবে সারাদিন মেঘ -পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা।পূর্ণিমার সময় চাঁদকে কাছেই দেখা’র মত আরেক দৃশ্য উপভোগ করা যাবে।

এছাড়াও রয়েছে বাজার এলাকায় থাকার ও খাবারের জন্য রয়েছে স্মৃতিময় বের্ডিং, স্বপ্ন বিলাস, নিরিবিলি বোর্ডিং এবং খাবারের জন্য রয়েছে নিখিল, হাসান এবং সেতু হোটেল এণ্ড রেস্টুরেন্টে । এছাড়াও পাওয়া যাবে নলছড়ির,ধূপ্যাচর ও দীঘল ছড়ি এলাকায় পাহাড়ি হোটেলে হরেক রকম পাহাড়ি মুখরোচক খাবার। খেতে ভুলবেন না যেন।

 

যাওয়ার পথেঃ- যাওয়া পথে পথে দেখা মিলবে নদীর দুইধারে পাহাড়, পাহাড়ি গ্রাম, দেখা মিলবে তংঘর – মাছাংঘর আরও দেখা মিলবে – বন্য হাতি, হরিন,বন মোরগ, বনবিড়াল,উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, বক, গাঙচিল, ছড়ালি,হাঁস,বনরুই, শুকর, ময়না, ঘুঘু কোকিল,মটুরা সহ অসংখ্য পশু -পক্ষির ও তাদের কলকাকলি। তবে জোঁকও রয়েছে। ঝর্ণার পথে দূর থেকে শোনা যাবে বিকট শব্দ।এই ঝর্ণাগুলো প্রসারিত রয়েছে যা পাথরের মাঠ।স্থানীয় ভায়ায় বড় সাদারী বলে।যা এত বড় সাদারী অন্য কোন ঝর্ণাতে নেই।এজন্য অনেকে এখানে পিকনিকও করে।

গাছ ও বাঁশের ফাঁকে হাটার পথে ডানে- বামে মোড় নিলে ঘুরে দেখলে এবং সোজা তাকালে ঐ যে ঐযে করে, একটু একটু দেখা যাবে ঝর্ণা।পৌঁছাতে পারলে সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। এবার ইচ্ছামত দেখা গোসল করা আর সেলফি নেওয়া।সঙ্গে প্রিয়জন পাশে থাকলে তো কথাই নেই। যা ছোঁয়ার পরে মনের আনন্দে দেখা ও গোসল