মিস্টি কুমড়ার ফলন ভালো,দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় জুমিয়ারা।


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ৩০/০৯/২০২২, ১২:২৫ AM / ১৬
মিস্টি কুমড়ার ফলন ভালো,দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় জুমিয়ারা।

মোঃ শহীদুল ইসলাম।

জয়বাংলা কৃষি ডেস্ক-

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ,সুস্বাদু সবজি হিসেবে সকলের কাছে জনপ্রিয় মিষ্টি কুমড়া।এ বছর অনেক পাহাড়ি কৃষক জুমে ধান  চাষের পাশাপাশি,পাহাড়ে মিস্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন স্থানীয় অনেক কৃষক।

পার্বত্য বান্দরবানে পাহাড়ে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া গুলো হালকা মিস্টি স্বাদের হয়ে থাকে,চাষ পদ্ধতি ও মাটির উর্বরতার কারনে উৎপাদনও হয় ভালো।
দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় বলে মিষ্টি কুমড়ার চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।

জেলা ও জেলা সদরের বাইরেও প্রচুর চাহিদা থাকায় বান্দরবানের পাহাড়ে জুম চাষের পাশাপাশি বাড়ছে মিষ্টি কুমড়ার চাষও।তবে চলতি মৌসুমে পাহাড়ের জুম চাষীরা তেমনটা লাভবান হচ্ছেনা বল্লেন অনেক কৃষক।ক্ষরা মৌসুম,বৃষ্টি পাত কম হওয়ার কারনে এমনিতেই ধানের ফলনও আশানুরূপ হয় নি এবার।

তাছাড়া পাহাড়ের জুম ধান ক্ষেতে এবার ইদুরের প্রকোপের কারনে অনেক জুমিয়ারা ফসল ঘরে তোলার আগেই তা মাঠে নষ্ট হয়ে গেছে।ফলে চলতি মৌসুমে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাহাড়ি জুম চাষিরা খাদ্য সংকটে পড়তে পারেন বলে মনে করেন অনেক স্থানীয় কৃষক।

সরজমিনে জেলা সদরের টংকাবতি ইউনিয়নের নতুন রাস্তায় গেলে দেখা মিলবে রাস্তার দুই পাশেই সারি সারি বস্তায় জুমের ক্ষেত হতে তুলে আনা মিস্টি কুমড়া প্যাকিং এর কাজে ব্যাস্ত কয়েক জন দিনমজুর।প্রতিদিন ৫০০-৭০০ টাকা তাদের মজুরি।

স্থানীয় জুম কৃষক হন্দ ম্রো জানালেন নিজের কস্টের কথা। এ মৌসুমে তিনি ২ কানি জমিতে মিস্টি কুমড়ার চাষ করেছেন, জমীতে ফলন পেয়েছেন ৫০ মন,তিনি জানালেন এই ৫০ মন মিস্টি কুমড়ার ফলন তুলতে সার ও আনুষঙ্গিক মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

এখন পাইকারি দরে পাইকাররাও প্রতি মন ৬০০ টাকার উপরে দিতে চাইছে না।এমন অবস্থায় উৎপাদন খরচটাই শুধু তোলা সম্ভব হচ্ছে লাভের মুখ হয়ত এ বছর আর দেখা হবে না।তার ছেলে চেন্ডি ম্রো পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার সাথে ক্ষেতে কাজ করেছেন,পরিশ্রম করেছেন তার স্ত্রীও,বৃষ্টি কম হওয়া আর জমিতে ইঁদুরের উৎপাতের কারনে ধানের ফলনও ভালো হয়নি তার, মিস্টি কুমড়ার ফলনে লাভ না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে এই জুমি কৃষক পরিবার।

একই ইউনিয়নের রঞ্জুপাড়া, বৃকফিল্ড বাজার এলাকার স্থানীয় কৃষক রেংটন ম্রো জানালেন তিনি নিজেও পাইকারি দামে প্রান্তিক জুমিয়া কৃষকদের কাছ হতে মিস্ট কুমড়া সংগ্রহ করেছেন মন প্রতি ৬০০ টাকা করে।তবে জেলার বাইরের পাইকারী ব্যাবসায়িদের সাথে যোগাযোগ ভালো থাকায় তিনি প্রতি মন ৮০০ করে বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারনা করছেন।

স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা যায় খুচরা ব্যাবসায়িরা প্রতি কেজি মিস্টি কুমড়া ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে বিক্রয় করছেন।তবে জেলার বাইরে ও রাজধানী ঢাকাতে এর মূল্য ৪০-৪৫ টাকা।সে হিসেবে খুচরা বাজারে মিস্টি কুমড়ার প্রতি মনের মূল্য একহাজার থেকে বারোশো টাকা।এছাড়াও সাইজের তারতম্যে এর মূল্য কম বেশিও বিক্রি করা হচ্ছে।

এমনি কথা হলো পাইকারী ব্যবসায়ী তনইয়া ম্রো,লংঙি ম্রো সহ আরো কয়েকজন কৃষকের সাথে।তারা জানালেন এই মৌসুমে আবহাওয়ার অনেক বড় প্রভাব পড়েছে জুম চাষে,ধানের উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি অন্য সবজি উৎপাদনও আশানুরূপ হয় নি ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতির আশংকাও ফেলে দেয়ার মত না।

 

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, সদর সহ জেলার সাত উপজেলায় গত বছর ২৪৮ হেক্টর জমিতে মিস্টি কুমড়ার চাষ হয়েছিল,যা থেকে ৪ হাজার ৫ শত ১২ মেঃটন ফলন পাওয়া গিয়েছিল। তবে চলতি মৌসুমে ৩৪২ হেক্টর জমিতে মিস্টি কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে।গত বছরের চেয়ে চলতি বছর চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে ৯৪ হেক্টর বেশি, যার অধিকাংশ জমি পাহাড়ি।সদর উপজেলায় ১ শত পাঁচ হেক্টর পাহাড়ি ও সমতল জমিতে মিস্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গত বছরের মতই উৎপাদনের হার বজায় থাকবে।

পাহাড়ি এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বাজারজাত করণের সহজ উপায় না থাকায় ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এমনটাই অভিযোগ জানালেন জুমিয়া কৃষকদের অনেকেই।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি সংখ্যক চাষ যোগ্য পাহাড়ি ও সমতল জমিতে মিস্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে এবার ফলন ভালো হবে।যোগাযোগ ব্যাবস্থাও আগের চেয়ে অনেক উন্নত তাই কৃষকেরা বাজারে ভালো দাম পাবেন বলে মনে করি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের উন্নত চাষ পদ্ধতি ও অধিক ফলনের জন্য প্রতিনিয়তই পরামর্শ এবং মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করে থাকে।

 

 

ঘুরে  আসুন রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ি’র  মায়াবী  গাছকাটা ছড়া ঝর্ণায়।