দূর্গম  ফারুয়া ইউনিয়নের তাংকুইতাং গ্রামের নয়ন মুনি তঞ্চঙ্গ্যা এসএসসিতে পেলো জিপিএ -৫


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ২৯/০৭/২০২৩, ৯:০৯ PM / ১০৫
দূর্গম  ফারুয়া ইউনিয়নের তাংকুইতাং গ্রামের নয়ন মুনি তঞ্চঙ্গ্যা এসএসসিতে পেলো জিপিএ -৫

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই ( রাঙামাটি)।

রাঙামাটি জেলার  প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর উপজেলা বিলাইছড়ি। কাপ্তাই লেকের কোল ঘেঁষে পরীহলা  মৈন এবং বিলাইছড়ি মৈন এর  পাদদেশে অবস্থিত বিলাইছড়ি উপজেলা সদর।

এই উপজেলার দূর্গম একটি ইউনিয়ন  ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়ন। মাধ্যমিক স্তরের  শিক্ষা বিস্তারের আতুঁর ঘর হিসেবে পরিচিত ফারুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়। ভরা মৌসুমে বিলাইছড়ি উপজেলা সদর হতে কাপ্তাই লেক এবং রাইংক্ষ্যং খাল ধরে প্রায় ৭০ কি: মি: নৌপথে  এই ফারুয়া ইউনিয়নে যেতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা হতে সাড়ে ৩ ঘন্টা এবং শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি শুকিয়ে গেলে এখানে  পৌঁছাতে লাগে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা।

গত শুক্রবার প্রকাশিত চট্টগ্রাম বোর্ডের এসএসসি ফলাফলে  এই ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বানিজ্য বিভাগের ছাত্র
নয়ন মুনি তঞ্চঙ্গ্যা অর্জন করেছে জিপিএ – ৫। বিলাইছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় এই ১ জন মাত্র ছাত্র জিপিএ :৫ পেয়েছে এবছর।
নয়ন মুনি তঞ্চঙ্গ্যার এই অর্জনে তার পরিবার, শিক্ষক এবং সহপাঠীদের মধ্যে আনন্দের সুবাতাস বইছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শান্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, নয়ন মুনি তঞ্চঙ্গ্যার পিতা পুর্নিমা মুনি তঞ্চঙ্গ্যা এবং মাতা আসন বালা তঞ্চঙ্গ্যা।বাবা -মা’র পেশা জুম চাষ। ফারুয়া ইউনিয়ন এর তাংকুইতাং গ্রামে তাদের পৈত্রিক বাড়ি।
ফারুয়া স্কুল হতে  তার  বাড়ীর দূরত্ব প্রায় ১০ কি:মি:।  প্রতিদিন সে পায়ে হেঁটে   উঁচু নীচু পাহাড় এবং ছড়া পাড় হয়ে  প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় ব্যয় করে স্কুলে আসা যাওয়া করতো।

প্রধান শিক্ষক আরোও জানান, আমাদের পরীক্ষার কেন্দ্র বিলাইছড়ি সদরে অবস্থিত বিলাইছড়ি  সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।  এত দূর থেকে কষ্ট করে পরীক্ষা কেন্দ্রে  এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো রেজাল্ট করা খুবই কঠিন।  আমাদের বিদ্যালয়ে  যেসমস্ত  শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে সবাই দূর্গম এলাকার।অনেক শিক্ষার্থী আছে স্কুল থেকে যাদের  বাড়ীর দূরত্ব দুই থেকে তিনদিন হাঁটার পথ। যদি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের মাধ্যমে আবাসিক বিদ্যালয় করা হয় তাহলে ফারুয়ার শিক্ষার হার আরো বেগবান হবে এবং এখানকার আত্মসামাজিক প্রেক্ষাপট আমূল পরিবর্তন হবে। আর এসএসসি কেন্দ্র না থাকায় প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের চরম দূরাবস্থা এবং লক্ষ লক্ষ টাকারও অপচয় হচ্ছে। কারন স্কুল থেকে পরীক্ষার কেন্দ্র দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। তাই শিক্ষার্থীদের দূরাবস্থার কথা চিন্তা করে এসএসসি কেন্দ্র এবং আবাসিক বিদ্যালয় করন খুবই জুরুরি। আর আমার বিদ্যালয়ের রেজাল্ট খুবই ভালো, প্রতিবছর জেএসসি এবং এসএসসিতে উপজেলায় আমার স্কুল সর্বদা প্রথম হয়।

প্রধান শিক্ষক শান্তিময় তঞ্চঙ্গ্যার মাধ্যমে যোগাযোগ হয় এসএসসিতে বিলাইছড়ি উপজেলা হতে একমাত্র জিপিএ – ৫ অর্জনকারী ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নয়ন মুনি তঞ্চঙ্গ্যার সাথে।  সেই জানান, আমরা ২ বোন এক ভাই। আমি সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমাদের বাবা মার পেশা জুম চাষ। প্রতিদিন আমি আড়াই ঘন্টা হেঁটে স্কুলে আসি। ছুটির দিন জুম চাষে বাবা মাকে সাহায্য করি।
আর্থিক অনটনে প্রাইভেট পড়তে না পারলেও ক্লাসে স্কুলের শিক্ষকদের পাঠদান আমাকে এই ফলাফল অর্জনে সহায়তা করেছে। ভবিষ্যতে আমি বিসিএস ক্যাডারের মাধ্যমে শিক্ষক হয়ে মানুষ গড়তে চাই।

এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান জানান, দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়ন এর অতি দুর্গম তাংকুইতাং পাড়া থেকে নয়নমনি তঞ্চঙ্গ্যা জিপিএ – ৫ পেয়েছে শুনে অনেক ভালো লাগছে। ফারুয়াতে এখনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট পৌঁছেনি। এখনো সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হতে পারেনি। এরুপ অবস্থা থেকে জিপিএ -৫  পাওয়াকে আমরা প্রতিভার বিস্ফোরণ নামে আখ্যায়িত করতে পারি। এরুপ প্রতিভাবানদের সাফল্য কামনা করি।