পর্যটন বিকাশে বান্দরবানে আধুনিক রিসোর্ট চায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ১৫/০৩/২০২১, ৬:৪৯ AM /
পর্যটন বিকাশে বান্দরবানে আধুনিক রিসোর্ট চায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান। আর বান্দরবানের চন্দ্র-পাহাড়কে যেন প্রকৃতি তার আপন হাতে সাজিয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৪০০ ফুট ওপরে চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ স্থানে চন্দ্র পাহাড়ের অবস্থান। ওপরে বিস্তৃত নীল আকাশ, নিচে সবুজের গালিচা, যে দিকে চোখ যায় দিগন্ত রেখা পর্যন্ত শুধু ছোট-বড় পাহাড় দেখা যায়। গোধূলির আলো-আঁধারিতে সূর্যাস্তের লাল আভার সঙ্গে যে দিকেই চোখ পড়ে দেখা যায়—সাদা মেঘের ভেলা ও একরাশ নীল আকাশ।

চন্দ্র-পাহাড়কে ঘিরে বিকশিত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। দৃষ্টিনন্দন এই পাহাড়ে আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট নির্মাণ হলে তা এই এলাকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে। আর এলাকায় পর্যটন বাড়াতে বান্দরবানে আধুনিক রিসোর্ট চায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও। গতকাল সাংবাদিকরা সরেজমিন যান চন্দ্র-পাহাড় এলাকায়। আমাদের প্রতিনিধি ২০ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেন। তারা বলেন, আমরা এলাকায় পর্যটন শিল্প বিকাশের পক্ষে। আধুনিক রিসোর্ট নির্মাণ হলে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে আসবেন। এতে তাদের জীবনমান উন্নত হবে।

তবে এর বিরোধিতায় নেমেছে পাহাড়ের স্থানীয় প্রভাবশালীরা। পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হলে ঐ মহলের বড় অঙ্কের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে বছরে তারা তিন পার্বত্য জেলা থেকে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার চাঁদা তোলে। এই টাকার ভাগ যায় কথিত বুদ্ধিজীবী, কথিত সুশীল সমাজের মানুষের কাছে। পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্প বিকাশে বিরোধিতায় নেমেছে দুই সংগঠন জেএসএস ( মূল) ও ইউপিডিএফ ( মূল)। তারা চাঁদাবাজির টাকার কিছু অংশ বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে বাকিটা আত্মসাৎ করেন। তাদের ছেলেমেয়ে ও পরিবারের সদস্যরা বিদেশে বসবাস করেন।

বান্দরবানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠা হলে তাদের কর্তৃত্বের অবসান ঘটবে বলে তারা অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে দিতে চায় না। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে কথিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের একটি অংশ। এই গোষ্ঠীটি বান্দরবানে আধুনিক রিসোর্টের বিরোধিতার নামে মিথ্যাচারে লিপ্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আন্দোলনে একজন নারী নেত্রী নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যিনি নানা কারণে বিতর্কিত। আন্দোলনের নামে কোটি কোটি টাকা বিদেশ থেকে এনে খরচ করেছে মাত্র ৫ লাখ টাকা। ঐ নারী নেত্রীর শ্বশুর বিতর্কিত ও স্বাধীনতাবিরোধী। তার স্বামী বর্তমানে সরকার থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। অথচ স্বামী-স্ত্রী মিলে পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন খাতের উন্নয়নে দেশ-বিদেশে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বিষয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।

তারা বলেন, তাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়ালেখা করেন। আমরা এ দেশে থাকি। আমাদের উন্নয়ন ঘটাতে হলে এলাকায় পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে হবে। আধুনিক রিসোর্ট ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

বান্দরবান জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশ ও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলার চন্দ্র-পাহাড়ে একটি বিশ্বমানের রিসোর্ট নির্মাণের জন্য আর অ্যান্ড আর হোল্ডিং লিমিটেড এবং আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবে সদর দপ্তরের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের মধ্যে ২০১৬ সালের ১২ জুন একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ২০ একর তৃতীয় শ্রেণির জমি পর্যটন কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনার জন্য বান্দরবান সেনা রিজিওনের অনুকূলে লিজ প্রদানের জন্য ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর চুক্তিবদ্ধ হয়।

স্থানীয় উপজাতিদের জীবন ও আচরণ বিঘ্নিত হয় এরূপ কার্যক্রম চুক্তির আওতাভুক্ত করা হয়নি। পর্যটন শিল্প পরিচালনায় ও ব্যবস্থাপনায় জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। উক্ত জায়গাটিতে কোনও রাস্তাঘাট, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ তথা কোনও নাগরিক সুবিধা নেই, কোনও মানুষ বসবাস করে না। এখানে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলে পরিবেশের ওপর কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে না।

বর্তমানে চন্দ্র-পাহাড় রিসোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, প্রয়োজনীয় রাস্তাসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং প্রকল্পের মূল কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রকল্প এলাকায় সরবরাহ করা হয়েছে। বান্দরবান জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পর্যটন শিল্পবিরোধী কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার করে আসছে, বান্দরবান জেলার বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের ডান পাশে চিম্বুক পাহাড়ের কোলে ৩০২ নম্বর লুলাইং মৌজা এবং—৩০৫ নং সেপ্রু মৌজায় কাপ্রুপাড়া, দোলাপাড়া, এরাপাড়া ও শোং নাম হুংপাড়ায় অন্তত ১০ হাজারর মৌ জনগোষ্ঠীর বসবাস।

কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, উক্ত চন্দ্রপাহাড় এলাকায় মাত্র চারটি ম্রো পাড়া রয়েছে। চন্দ্রপাহাড় থেকে কাপ্রুপাড়া উত্তর-পশ্চিমে ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এবং পাড়ায় সর্বমোট ৪৮টি পরিবারের বসবাস ও মোট জনসংখ্যা ৩২০ জন। চন্দ্রপাহাড় থেকে উত্তরে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এবং পাড়ায় সর্বমোট ১৯টি পরিবারের বসবাস ও মোট জনসংখ্যা ১২৭ জন। বর্তমানে উক্ত চন্দ্রপাহাড় এলাকায় সর্বমোট ১২৪টি পরিবার এবং ৮১৭ জন ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস করছে। যা গুজব রটনাকারীদের প্রচারিত তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট প্রমাণ করে।

বাংলাদেশের সংবিধান, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ১৯৮৯, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ১৯৯৭ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে ম্রোসহ অন্যান্য প্রথাগত জনগোষ্ঠীর অধিকার চর্চায় বাধা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। সরেজমিন বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং উপরোক্ত দলিলসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, উল্লিখিত এলাকায় কোনো জাতি গোষ্ঠীর অধিকার চর্চায় বাধা সৃষ্টি করা হয়নি।

এদিকে ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায় যে, ম্রো জনগোষ্ঠী অত্যন্ত নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির। এই প্রেক্ষিতে প্রশাসন তথা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনোরূপ ভয়ভীতি প্রদর্শনের নজির খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে যে প্রতিবাদগুলো ম্রোদের বলে প্রচার করা হচ্ছে তার সবগুলোই বরং বিভিন্ন কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক তাদের অসাধু স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ম্রো জনগোষ্ঠীকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনের মাধ্যমে সংগঠিত করেছে। এই অসাধু চক্রকে প্রতিহত করার সময় এসেছে বলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সুখে-দুঃখে সেনাবাহিনী ছাড়া কেউ এগিয়ে আসে না। বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার সমথং কারবারিপাড়া গ্রামে বন্য ভাল্লুকের আক্রমণে গুরুতর আহত উপজাতি ট্রয়েল মুরংকে (৬৬) সেনা ও বিমান বাহিনীর সহায়তায় উন্নত চিকিত্সার জন্য রবিবার জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। ঝিরি থেকে পানি আনতে গেলে বন্য ভাল্লুক তাকে আক্রমণ করে এবং সে গুরুতর আহত হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে বলিয়ারপাড়া আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আসে। পরে তাকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বেল-২১২ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বান্দরবান হতে চট্টগ্রামে আনা হয়।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা বলেন, আধুনিক রিসোর্ট নির্মাণে বিরোধিতাকারীরা নিয়মিত চাঁদা আদায়ের জন্য আসেন এবং তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল ছাড়া আর কিছুই করে না। সেনাবাহিনীর কারণে আমরা এখনো পাহাড়ে নিরাপদে আছি বলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা জানান। বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রিসোর্টটি প্রতিষ্ঠিত হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসবেন। এতে আমরাই উপকৃত হব। তাই বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা উচিত নয়।

তথ্যসূত্র:  ইত্তেফাক

পুরাতন সংবাদ পড়ুন…

FriSatSunMonTueWedThu
      1
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
     12
10111213141516
24252627282930
31      
     12
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
    123
45678910
18192021222324
25262728   
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
17181920212223
24252627282930
31      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
      1
2345678
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
252627282930 
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
   1234
567891011
262728293031 
       
   1234
567891011
19202122232425
262728    
       
15161718192021
22232425262728
293031    
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31