পাঁহাড়ে শুরু হচ্ছে জুমের ধান কাটা।


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ০৬/০৯/২০২২, ৮:৪৫ PM /
পাঁহাড়ে শুরু হচ্ছে জুমের ধান কাটা।

বিশেষ প্রতিবেদন।

সবুজ পাহাড় এখন সোনালী রঙে রঙিন। যেদিকে দুচোখ যায় সবুজ পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে জুমের পাকা সোনালী রঙের ধান। কেউ ধান কাটা শুরু করেছেন,কেউ ধান কাটার আগে সাথী ফসল সংগ্রহ করা শুরু করেছেন, আর কেউ জুমের ধান পাকার অপেক্ষায় রয়েছেন। তিন পার্বত্য জেলায় দুর্গম এলাকায় এখন জুমিয়াদের দম ফেলার ফুসরত নেই,চলছে জুমের ফসল ঘরে তোলার এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। পার্বত্য বান্দরবানে ১১টি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির বসবাস,তাদের জীবনাচার ভিন্নতার পাশাপাশি চাষাবাদ পদ্ধতিতেও আছে ভিন্নতা।

পাহাড়ী এলাকায় বসবাসকারী পাহাড়ী জনগোষ্ঠি পাহাড়ের ঢালু জায়গায় একধরণের চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সম্পূর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভর করে পার্বত্য অঞ্চলে বন জঙ্গল কেটে রোদে শুকানোর পর আগুনে পুড়িয়ে উঁচু উঁচু পাহাড়ের ঢালু ভুমিতে ধানসহ বিভিন্ন সাথী ফসল উৎপাদনের পদ্ধতিকে জুম চাষ বলা হয়।

জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দুরে চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যামিনী পাড়ার বাসিন্দা পালে ম্রো(৪৭) এবছর ৪আড়ি ধানের জুম চাষ করেছেন । পরিবারের ৩জন সদস্য নিয়ে ধান কাটছেন। শ্রমিক কেন নেন নাই প্রশ্ন করা হলে পালে ম্রো বলেন এবছর ধান ভালো হয়নি তাই শ্রমিক নিয়ে ধান কাটলে পোষাবেনা সেজন্য স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ধান কাটা শুরু করেছেন। ৪ আড়ি (১আড়ি সমান ১০কেজি) ধান চাষ করেছেন মাত্র ১শ আড়ি ধান পাওয়ার আশা করছেন, অথচ গত বছর ৪আড়ি জুমে ধান চাষ করে ২শ আড়ি ধান পেয়েছিলেন।

এবছর অনাবৃষ্টি ও বাতাস বেশী হওয়ার কারনে, ধানে চিতা বেশী জুমে ভালো ফলন হয়নি বলে জানান এই জুমচাষী। জুমের ধান কাটতে কাটতে বলেন জুম থেকে যা ধান পাবেন পরিবারে ৭জন সদস্য নিয়ে বছর পার করা যাবেনা,জুমে পাওয়া ধান নিয়ে বড়জোড় ৬মাস পর্যন্ত খাদ্য থাকবে এর বেশী চলা যাবেনা, এবছর খাদ্য সংকট দেখা দেবে বলে জানান তিনি, সেজন্য সাথী ফসল (তিল, কুমড়া,মিষ্টি কুমড়া,বেগুন,কাকন,চিনাল,মারফা) বিক্রি করে ধানের ক্ষতি পুষিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে জানান।

টংকাবতী ইউনিয়ন রামরি পাড়ার আরেক জুম চাষী তংরুই ম্রো (৪৫) ২আড়ি ধান জুম চাষ করেছেন এখনো ভালোভাবে পাকেনি আরো ২০-২৫ দিন পর কাটবেন বলে জানান, তিনিও বলেন এবছর বৃষ্টি কম ও সময়মত না হওয়ার কারনে জুমের ধান ভালো হয়নি। তংরুই ম্রো যোগকরেন বৃষ্টি কম আবার বাতাস বেশী হওয়ার কারনে ধানে চিতা বেশী সেজন্য এবছর জুমিয়াদের মুখে মলিন হাসি, প্রাণবন্ত হাসি নেই।

জুমের জায়গা নির্ধারণ নিয়েও পাহাড়ীদের বিভিন্ন মিথ বা বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। যেমন যে জুমচাষী একটা পাহাড় বা জায়গা ঠিক করলেন তিনি সেই জায়গা থেকে এক মুঠো মাটি নিয়ে আসবেন তারপর পাকপবিত্র মনে সেই একমুঠো মাটি বালিশের নীচে রেখে নিয়ত করে ঘুমাবেন। অর্থাৎ রাতে যেন জুমের জায়গাটা সম্পর্কে ভালোমন্দ স্বপ্নে প্রাপ্ত হন। এই জুমের জায়গা নির্ধারন সম্পর্কে থোয়াইঙ্গ্যা পাড়া নিবাসী প্রবীন ব্যক্তি,মংমে মার্মা (৮০) জানান ভালো স্বপ্ন যেমন বড় মাছ পাওয়া,পাহাড় উঠার স্বপ্ন, সাতার কেটে নদী পার হওয়া, গলায় স্বর্ণালঙ্কার পরিহিত অবস্থায়, স্বপ্নে কচ্ছপ পাওয়া দেখিলে ভালো বলে ধরে নেওয়া হয় আর খারাপ স্বপ্ন হলো আগুন দেখলে, সাপ, ভুতপ্রেত,বাঘ, হিংস্র প্রাণী স্বপ্ন দেখলে খারাপ বলে বিবেচিত হয়, জুম চাষী ভালো স্বপ্ন দেখলে ভালো দিনক্ষণ নির্ধারণ করে জঙ্গল কাটা শুরু করেন আর খারাপ স্বপ্ন দেখলে নতুন জায়গা খুঁজে নেন। নভেম্বর-ডিসেম্বরে জুমের জায়গা নির্ধারণ,জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসে জুমের জঙ্গল কাটা, মার্চ -এপ্রিল মাসে কাটা জঙ্গল-ঝাড়ে আগুন দেয়া, এপ্রিল মাস জুড়ে চলে জুমের জায়গা সম্পূর্ণ প্রস্তত করা আর কাঙ্খিত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা, বৃষ্টি হলে জুমে ধান সহ সাথী ফসল বপন শুরু করা হয়। যারা বৈশাখ মাসের প্রথম বৃষ্টির পর জুমে ধান বপন করতে পারেন তাদের ধান আগে পাকা শুরু করে। আর যারা একটু দেরীতে বপন করেন তাদের ধান দেরীতেই পাকে।

প্রতিবছর আগষ্ট মাসের শেষের দিকে জুমের ধান কাটা শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত জুমের ধান কাটা,মাড়াই ওশুকানোর প্রক্রিয়া চলে। ধান শুকানো শেষে জুমঘর থেকে মূল ঘরে ধান স্থানান্তর করার পর ফেব্রুয়ারী-মার্চে চলে জুমের নবান্ন উৎসব। এক জায়গায় প্রতিবছর জুম চাষ করা যায়না,এক বছর একবার জুম চাষ করার পর কমপক্ষে ৩বছর থেকে ৫বছর পর্যন্ত জায়গা ফেলে রাখতে হয় মাটি উর্বর হওয়ার জন্য। আমরা সচরাচর সমতলে দেখি প্রথমে বীজতলা তৈরী করতে হয় কিন্তু জুম চাষে সরাসরি ধান বপন করা হয়, আবার ধানের সাথে মিশ্র করে তুলা বীজ,ঠান্ডা আলু বীজ,যব বীজ,মিস্টি কুমড়ার বীজ,ভূট্টার বীজ,মারফা (শসা জাতীয় ফল) চিনাল (বাঙ্গী জাতীয় ফল) বীজ গুলো, আমিলা গুলো বীজ ( রোজেলা) ধানের সাথে বপন করা হয়। ধান বপন করার আগে মরিচ,তিল,বেগুন,সাবারাং (মসলা জাতীয় শাক) ধনিয়া পাতার বীজ,কাকন বীজ জুমের জায়গায় ছিটিয়ে দেয়া হয়।

জুমে ৩৫-৪০ প্রকার সাথীফসল করা হয়, জুম একটা পুরো বাজারের মতো, শুধু বাজার থেকে লবণ আর চিদোল (শুটকি জাতীয়) কিনলে একজন জুমিয়ার আর কিছুই কিনতে হয়না।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সুত্রে জানা যায় বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলায় চলতি বছরে ৮৭৫৫ হেক্টর জায়গায় জুম চাষ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্য মতে গত ২০১৯ সালে জুম চাষ হয়েছিল ৮৮৯৫ হেক্টর জমিতে প্রতি হেক্টরে চাউল উৎপাদন হয়েছিল ১দশমিক ৫৭ মেট্রিটন, ২০২০ সালে জুম আবাদ হয়েছিল ৯০২০ হেক্টর জমিতে আর চাউল উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ১দশমিক ৬৩ মেট্রিকটন ও ২০২১ সালে ৮৩৭৮ হেক্টর জায়গায় জুম আবাদ করা জুমে চাউল উৎপাদন হয়েছিল প্রতিহেক্টরে ১দশমিক ৬১ মেট্রিকটন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন গত বছর জুলাই-আগষ্ট মাসে বান্দরবানে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৩২৫মিলিমিটার চলতি বছর মাত্র ৫০মিলিমিটার, এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারনে জুমের ঢালু জায়গায় জুম ভালো হয়নি।

 

 

খাগড়াছড়ির আলুটিলায় নতুন স্থাপনা, বদলে গেছে পর্যটন কেন্দ্রের চেহারা।

পুরাতন সংবাদ পড়ুন…

FriSatSunMonTueWedThu
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
     12
10111213141516
24252627282930
31      
     12
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
    123
45678910
18192021222324
25262728   
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
17181920212223
24252627282930
31      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
      1
2345678
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
252627282930 
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
   1234
567891011
262728293031 
       
   1234
567891011
19202122232425
262728    
       
15161718192021
22232425262728
293031    
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31