পুনর্মূল্যায়ন ছাড়াই চলছে প্রকল্প অনুমোদন


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ১৯/০৮/২০২০, ৬:০৭ AM / ১৩
পুনর্মূল্যায়ন ছাড়াই চলছে প্রকল্প অনুমোদন

উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না কোভিড-১৯ পরিস্থিতি। পরিবর্তিত অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন ছাড়াই একের পর এক অনুমোদন দেয়া হচ্ছে প্রকল্প।

নতুন করে প্রক্রিয়াকরণে বিলম্বিত হতে পারে- এমন অজুহাতে পুনর্মূল্যায়ন করা থেকে বিরত থাকছে পরিকল্পনা কমিশন।

ফলে চলমান করোনার প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, পণ্য কেনাকাটায় অতিরিক্ত দর, শিক্ষা সফরের নামে বিদেশভ্রমণ, আপ্যায়ন, পরিদর্শন বাংলো নির্মাণ, চলচ্চিত্র, অডিও/ভিডিও নির্মাণ, অতরিক্ত পরামর্শক ব্যয়সহ নানা ধরনের ব্যয়প্রস্তাব অনুমোদন পেয়ে পাচ্ছে, যা বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

কয়েকটি একনেক বৈঠকের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৬ জুলাই থেকে ১৮ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পাঁচটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয় ৩৭টি উন্নয়ন প্রকল্প। এগুলোর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, গত কয়েকটি একনেকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই আগে প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়। তবে যেগুলো ইতোমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোয় ভয়ংকর কিছু ত্রুটি থাকলে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। আমাদের জানালে আমরা সেটি করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ ছিল না।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অবশ্যই একনেকে অনুমোদনের আগে তিনটি কারণে প্রকল্প প্রস্তাবগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত ছিল। প্রথমত, করোনার আগের পৃথিবী ও পরের পৃথিবী দুটোই আলাদা। এ

সব প্রকল্পের পিইসি সভা করোনার অবস্থার আগেই হয়েছিল। তখনকার গুরুত্ব আর এখনকার গুরুত্ব এক নয়। তখন যে চিন্তা করে প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছিল এখনও সেই চিন্তা কার্যকর আছে কি না? দ্বিতীয়ত, একনেকে অনুমোদন পেলেই তো টাকা দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য আছে কি না? গত জুলাইয়ের হিসাবে রাজস্ব আদায় অনেক কম হয়েছে। তাছাড়া একদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার তালিকা করে বরাদ্দ দিচ্ছে, অন্যদিকে একের পর এক নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, অনেক প্রকল্পে বিদেশভ্রমণ ও অতি পণ্যমূল্যসহ অযাচিত ব্যয়প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।

সুযোগ পেলেই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এর অপব্যবহার করতে পারবেন। এরকম হলে সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে। সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ এর কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সবকিছুই লকডাউন হয়ে যায়। এ সময় বন্ধ ছিল একনেক বৈঠকও। ফলে এর আগে প্রক্রিয়াকরণ সমাপ্ত হওয়া প্রকল্প প্রস্তাবগুলো জমা ছিল পরিকল্পনা কমিশনের একনেক অনুবিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে।

পরবর্তী সময়ে যখন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে একনেক বৈঠক শুরু হয়, তখন ওইসব প্রকল্পই অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। এ রকম কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে- খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প। এটি গত ২৮ জুলাই অনুমোদন দেয় একনেক। অথচ প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৩ জানুয়ারি। ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক ধরা হয়েছে ৭৪০ জন (ফার্ম ও ব্যক্তি মিলে)। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৯ কোটি টাকা।

আছে কর্মকর্তাদের স্টাডি ভিজিট বাবদ ৪০ লাখ টাকার সংস্থানও। এছাড়া ‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ৮ জন কর্মকর্তার বিদেশ সফরে ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়। প্রশিক্ষণের নামে এই সফরে প্রত্যেকের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা করে। এটি ২৮ জুলাই অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু পিইসি সভা হয়েছিল করোনা শুরুর আগেই। এছাড়া সারা দেশে পুকুর, খাল খনন উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে করোনা-পরবর্তী পর্যায়ে।

এর আগে ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় পিইসি সভা। প্রকল্পটির আওতায় ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৮ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগেই পিইসি করা আরও কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে- জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্প।

এছাড়া তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট, রাজশাহী মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্বাসন, মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প এবং কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্পে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অযাচিত ব্যয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল মনসুর মো. জয়জুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন থাকলেও সেটি করা সম্ভব হয়নি। কেননা আবার নতুন করে দেখতে গেলে অনেক সময় চলে যেত। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখতে এটি হয়তো করা হয়নি। তবে অন্তত বেশকিছু ব্যয় সংশোধন করা উচিত ছিল।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুনর্মূল্যায়ন করতে গেলে অনেক বিলম্ব ঘটত। তাই করা হয়নি। তবে অপ্রাসঙ্গিক ও অযাচিত ব্যয়ের ক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকলেও সেটি খরচ করতে পারবে না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কেননা সরকার ইতোমধ্যে গাড়ি ক্রয়, বিদেশভ্রমণ স্থগিত করেছে। সেই সঙ্গে আপ্যায়ন ব্যয়সহ পণ্যমূলের অতিরিক্ত দামের বিষয়টিও সতর্ক করা হয়েছে।