সীমান্তে গুণেগুণে ১২ মর্টারশেলে কেঁপে উঠলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প সহ ঘুমধুমের ১২ পাড়া।


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ১৮/০৯/২০২২, ৯:২৫ PM / ১১
সীমান্তে গুণেগুণে ১২ মর্টারশেলে কেঁপে উঠলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প সহ ঘুমধুমের ১২ পাড়া।

আবদুর রশিদ (নাইক্ষ্যংছড়ি),তুম্ব্রু সিমান্ত থেকে।

 

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে আরকান আর্মিকে লক্ষ্য করে গুণেগুণে ১২ মর্টারশেল নিক্ষেপ করেছে জান্তা সরকারের সেনা সদস্যরা। আর এতে কেঁপে উঠলো শূণ্যরেখায় আশ্রিত সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা সহ ঘুমধুমের ১২ পাড়া। বিষয় টি নিশ্চিত করেছেন,তুমরু বাজার ব্যবসায়ী বদি আলম গ্রাম পুলিশ আবদু জাব্বার,রোহিঙ্গা আবদুচ্ছালাম,দক্ষিন চাকঢালার ফরিদ আলম ও জাফর আলী।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে এ মর্টারশেলের প্রকট আওয়াজে ঘুমভাঙ্গে ১২ পাড়া মানুষের । এর আগে শনিবার রাত ৮ টায়
মিয়ানমারের একটি যুদ্ধ বিমান তুমব্রু
শূণ্যরেখা ঘেষে মিয়ানমার আকাশে উড়তে দেখেছে তুমব্রুসহ সীমান্তের বাসিন্দারা।
এছাড়াও রোববার সারাদিন মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শুনা গেছে সীমান্ত জুড়ে।
তারা আরো বলেন,যে ১২ গ্রামের মানুষ তটস্থ সে গুলো হলোঃ তুমব্রু,কোনার পাড়া,বাইশফাঁড়ি,তুমব্রু,হেডম্যানপাড়া,ভাজাবুনিয়া,মধ্যমপাড়া,উত্তরপাড়া,বাজার পাড়া,গর্জনবুনিয়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিন চাকঢালা,সাপমারা ঝিরি ও জামছড়ি।

তুমব্রুূ শূণ্যরেখায় আশ্রিত একাধিক রোহিঙ্গা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান,জান্তা সরকারের আর্মি ও জান্তা বিদ্রোহী আরকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে মিয়ানমার সীমান্তে। তারা দু’বাহিনীই বর্তমানে দিশেহারা। তাই তাদের গোলা বাংলাদেশে এসে পড়ছে বার বার। শুক্রবারের গোলা আঘাতে হতাহতের রাতটা ছিলো তাদের কাছে ভয়াবহ একটি ঘটনা।
আর সে কারণে তুমব্রু শূণ্যরেখায় আশ্রিত সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা এখন এ ক্যাম্প ছেড়া অন্যত্র পালাচ্ছে ছোট ছোট দলে। বাকীরাও প্রস্তুুতি নিচ্ছে।

এদিকে রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সীমান্তে উদ্ভুত পরিস্থিতে জনপ্রতিনিধিদের করণীয় শীর্ষক এক জরুরী সভা ডাকেন নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌস। এতে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের মধ্যে শুধু ঘুমধুম ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ডাকা হয়।সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সীমান্ত পরিস্থিতি ও করণীয় কী জানতে চেয়ে
বক্তব্য রাখেন।

সূত্র জানান,সীমান্তে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তিনশ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে প্রশাসন। সীমান্তের কাঁটাতার বেড়া সংলগ্ন তুমব্রু, ঘুমধুম, হেডম‍্যান পাড়া, ফাত্রা ঝিড়ি, রেজু আমতলী এলাকায় বসবাসকারী এসব পরিবারের প্রায় দেড় হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে নেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। ঘুনধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বৈঠকে জানানো হয় ঘুমধুম ইউনিয়নে কোন আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া স্কুলগুলোতেও থাকার কোন পরিবেশ নেই। এ পর্যায়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

এছাড়াও ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ ও সদর ইউনিয়ন পরিষদ নুরুল আবসার ইমন আরো বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার সরকারের সেনাসহ যৌথ বাহিনী ও তাদের বিদ্রোহী আরকান বাহিনীর মধ্যে
তুমুল লড়াই চলছে। বিশেষ করে ঘুমধুমের কোনার পাড়াসহ ৮ গ্রাম আর সদর ইউনিয়নের দক্ষিন চাকঢালাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দু’বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলছে প্রকট আওয়াজে। যাতে তাদের ইউনিয়নের সকলে ভয়ে আতংকগ্রস্থ। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা
ভয়ে পড়া-লেখা পযর্ন্ত করতে পারছে না।

তারা আরো জানান,সীমানা ঘেষে এ গোলাগুলিতে সীমান্ত সড়কের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে ১৫/২০ দিন । একই সাথে সীমান্তে বিভিন্ন বাগান ও ক্ষেত-খামারের কাজও বন্ধ থাকায় শতশত সীমান্তবাসী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে বর্তমানে।

এ ছাড়া গত শুক্রবার মিয়ানমারের মর্টারশেলের হামলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০ নম্বর সেটের ইকবাল উদ্দিন (২৮) নামের যুবক নিহত ও কাছাকাছি হেডম্যান পাড়ার ১০০ গজ পূর্বে ৩৫ পিলারের কাছে মিয়ানমার বাহিনীর পূঁতে রাখা স্থলমাইনে বাঙ্গালী অন্যখাই তংচঙ্গার পা উড়ে যাওয়ার পর সীমান্ত জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

জবাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌস বলেন,বিষয় গুলো সরকারের উপরি মহল তা অবগত আছেন। তবে এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী হতে পারে আর এসবে প্রতিকার নিয়ে
সবাইকে কাজ করার নির্দেশনা দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।বিশেষ করে সরকার শান্তি চায় আবার
যে কোন পরিস্তিতি বিধি সম্মতভাবে মোকাবেলাতেও সজাগ আছে।

উল্লেখ্য,বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত রয়েছে ২৮০ কিলোমিটার। তন্মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির বিপরীতে স্থল সীমানা ৯১ কিলোমিটার। তবে মিয়ানমার বাহিনী ও
আরকান আর্মির যুদ্ধ চলছে ৩৮ কিলোমিটার ৩১ থেকে ৪০ আর ৪৪ ও ৪৫ পিলার এলাকার বিপরীতে। তবে যুদ্ধ না চললেও মিয়ানমার সীমানার বাকী পিলার এলাকাও ঝুঁকিতে বলে জানান বোদ্ধা সহল।

 

 

 

 

মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ফের তলব, কড়া প্রতিবাদ ঢাকার!