অনলাইন ডেস্ক:
মুক্তিযোদ্ধাদের সেই শোভাযাত্রাটি যখন যে জেলায় যাবে সেই জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা মহাসমাবেশে মিলিত হয়ে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের হাতে পতাকা হস্তান্তর করবেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রস্তাবিত রূপরেখা নিয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ণাঢ্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আহ্বায়ক করে নয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা কমিটি করে সরকার।
রোববার সেই কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, আগামী ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব।
“বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী করোনাভাইরাসের কারণে যথাযথভাবে পালন করতে পারিনি। সেজন্য সরকার মুজিববর্ষকে আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছে। সে কারণে অনেকগুলো কর্মসূচি সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে সমন্বয় করে পালন করব।”
সুবর্ণজয়ন্তীর থিম সং নির্বাচন করতে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি উপ-কমিটি, লোগের জন্য শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নেতৃত্বে একটি এবং ওয়েবসাইট খুলতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পালকের নেতৃত্বে তিনটি উপ-কমিটি করা হয়েছে বলে জানান মোজাম্মেল।
তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওয়েবসাইট এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে লোগো এবং চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যেই থিম সং নির্বাচন করা হবে।
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বছরব্যাপী কি কর্মসূচি নেওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ সভায় সেই প্রস্তাবিত রূপরেখা উপস্থাপন করেন।
মন্ত্রী মোজাম্মেল বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যরা নতুন নতুন অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। সেসব কম্পাইল করে আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে। চূড়ান্ত কর্মসূচি প্রকাশের আগে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ও তার নির্দেশনা নিয়ে তা চূড়ান্ত করা হবে।
আগামী ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি এবং সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি যৌথভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বলে জানান মোজাম্মেল।
তিনি বলেন, সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করবেন, রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিদেশি রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধানরা সেখানে থাকবেন।
প্রস্তাবিত রূপরেখা
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব বলেন, “২৬ মার্চের জাতীয় কর্মসূচি চলবে। পাশাপাশি বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (সুবর্ণজয়ন্তীর) বিশেষ অনুষ্ঠানের (উদ্বোধনী অনুষ্ঠান) পরিকল্পনা করা হয়েছে।
“২৬ থেকে থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরব্যাপী কর্মসূচি থাকবে। এর লক্ষ্য হবে মানুষের মধ্যে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঘটনাবলী, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গণাদের যে অবদান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের যে অবদান সে বিষয়গুলো স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া।
“টিভিসি, ডকুমেন্টারি, স্বল্প ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদশর্ণী, ৫০টি পতাকা নিয়ে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ২৬ মার্চ থেকে সুবর্ণজয়ন্তী শোভাযাত্রা শুরু হবে, সেটি ৬৪ জেলা প্রদক্ষিণ করে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে শেষ হবে। এই শোভাযাত্রা যখন জেলায় যাবে তখন সেখানে মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশ এবং তার সঙ্গ অন্যান্য আলোচনা অনুষ্ঠান হবে।”
এর বাইরে অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার অনুষ্ঠানে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা গল্প বলবেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা গণহত্যা নিয়ে কাজ করেন তাদের নিয়ে সেমিনার থাকবে। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে মুক্তির উৎসব বা স্বাধীনতার উৎসব নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানান সচিব তপন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে ৫০ বছরে বাংলাদেশে যে উন্নতি বাংলাদেশ যে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, সেই সাফল্যগাঁথা তুলে ধরা হবে।
“সেটি যেমন চলচ্চিত্র বা ডকুমেন্টারির মাধ্যমে হবে, তেমনি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সামিটের চিন্তা করেছি, গ্লোবাল বিজনেস সামিট। নাম করা সাহিত্যিক, নোবেল লরিয়েট, অর্থনীতিবিদ তাদের নিয়েও বিভিন্ন কনফারেন্স আয়োজনের চিন্তা করা হয়েছে।
“মোবাইল গেমস, ই-বুকের চিন্তা করা হচ্ছে। মোবাইল গেমস বা অ্যানিমেশন কার্টুন কিন্তু শিশু-কিশোরদের বেশি আকর্ষণ করে। মুক্তিযুদ্ধের ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে। আরেকটি প্রস্তাব এসেছে ‘বীরের কন্ঠে বীর গাঁথা’, জীবিত যে ৯০ হাজার বা এক লাখ মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদের সবার কাহিনী- কেন মুক্তিযুদ্ধে গেলেন, কী অবদান রাখলেন, তাদের জীবন দর্শন, সেটি ভিডিও করা হবে, তা আর্কাইভ করা হবে।”
মিত্রবাহিনীর যারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে জীবন নিয়েছেন, তাদের স্মরণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ক বইপুস্তক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মুক্তিযোদ্ধা কর্নার ও সব গ্রন্থাগারে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
তিন ধরণের বই ছাপানোর চিন্তা করা হচ্ছে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরেক ধরনের বই ছাপিয়ে সেগুলো ছেলেমেয়েদের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছানোর পরিকল্পনা আছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের নির্যাতন নিপীড়ন নিয়ে শর্টফিল্ম করে তা গ্রামেগঞ্জে, হাট-বাজারে প্রচার করা হবে বলেও জানান মুক্তিযু্দ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
মোজাম্মেল বলেন, এগুলো আমাদের পরিকল্পনা, আরও কিছু সাজেশন পাব, সেগুলো কম্পাইল করে আমরা কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব।
সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কোথায় হবে, সেই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা প্যারেড স্কয়ারে করব। ফেব্রুয়ারিতে যদি করোনা পরিস্থিতির পরিবর্তন আসে আমরা যেটা প্রত্যাশা করছি তা হল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে, যদি ছোট আকারে হয় তাহলে প্যারেড স্কয়ারে করব।”
ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
তিনি বলেন, কীভাবে সুবর্ণজয়ন্তী যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বর্ণাঢ্যভাবে পালন করা যায় সে বিষয়ে যেকেউ সংক্ষিপ্তভাবে পরামর্শ দিতে পারবে, সচিবের কাছে মেইলে বা হার্ড কপি আকারে পাঠাতে পারবে।
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তাবিত রূপরেখায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ উত্তরীয়/ টি-শার্ট/ক্যাপ এবং বীরাঙ্গণাদের শাড়ি/শাল উপহার দেওয়া হবে।
“মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে। উপজেলা পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মহাসমাবেশ হবে।”
এছাড়া সুবিধাজনক সময়ে সুবর্ণজয়ন্তী সৌধ, মিনার বা কলাম নির্মাণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ পদক প্রবর্তন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের হেড কোয়ার্টাসে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে বলে প্রস্তারিত রূপরেখায় বলা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :