মোঃ শহীদুল ইসলাম।
“মশা” অতিক্ষুদ্র এই প্রানীর বহন করে ৫ টি রোগের জীবানু,স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা দেখা যায়, এদের মধ্যে সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়।বেশিরভাগ পার্বত্য অঞ্চল ও সীমান্তবর্তী এলাকাতেই মশা বাহিত রোগ ম্যালেরিয়া,ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুন গুনিয়া বেশি দেখা যায়,সাধারণত বছরের গ্রীষ্মকালে এই সব রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়।মশা বাহীত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া,ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুন গুনিয়া রোগ উল্লেখযোগ্য।
সরজমিনে দেখা যায় বান্দরবানের সদর উপজেলার পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের নালা নর্দমায় জমে থাকা ময়লার স্তুপ ও ড্রেনে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নিচ্ছে এডিস সহ ম্যালেরিয়া জীবাণু বহনকারী মশা,জলাবদ্ধতা ও নিয়মিত ড্রেন পরিস্কার না করার কারনে মশার বংশবৃদ্ধি বেশি হচ্ছে বলেও জানান স্থানীয়রা,সন্ধ্যে নামলেই বাসাবাড়িতে এই সব মশার উপদ্রবের কারনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে শিশু থেকে বুড়ো।
পৌর এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালেহা বেগম বলেন মশার কারনে সন্ধ্যের পর পর কয়েল জ্বালিয়ে রাখা লাগে।বাচ্চারা সন্ধ্যার পর পড়া লেখা করতে বসতে অসুবিধে হয়,বয়স্কদেরও অনেক অসুবিধে হয়।৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কি কিউ মারমা বলেন সন্ধ্যে নামলেই মশার জ্বালায় অস্থির হয়ে উঠে,নদী তীরবর্তী যারা বসবাস করে তাদের অসুবিধা অনেক বেশি,ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বেশি ভয়ে থাকি,পৌরসভা থেকে কার্যকর কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ না করলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে।
৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ হানিফ বলেন মশার উপদ্রুব এখন অনেক বেশি,নালা নর্দমা পরিস্কারের ব্যাবস্থা গ্রহণ না করলে দিনদিন মশা আরো বাড়বে,এ বিষয়ে ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিম রেজা জানান বিভিন্ন সময় মশা নিধনে পৌরসভার পক্ষ হতে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হয়, শীগ্রই মশক নিধনে পৌরসভার মাধ্যমে ব্যাবস্থা নিবো।
পৌরসভার সাথে আলোচনা করে সমাধানে ব্যাবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অজিত কান্তি দাশ,একই ব্যাবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারুন সরদার।জেলা সদরের সবচেয়ে ব্যাস্ততম এলাকা পৌরসাভার ৪ নং ওয়ার্ড,বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আছে আবাসিক এলাকা,এছাড়াও শংখ নদীর তীরবর্তী ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ ওমর ফারুক জানান ইতিমধ্যে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড ও আরো কয়েকটি ওয়ার্ডে ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে পৌরসভা,তিনি আরো জানান মেশিনের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য পৌর মেয়রকে প্রস্তাবনাও প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পৌর মেয়রের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।পৌর এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের এত আশ্বাসের পরেও মশা নিধনে পৌরসভার পক্ষ হতে এখনো কার্যত কোন ব্যাবস্থা গ্রহন চোখে পড়ছে না,যদিও পৌরসভার সচিব তৌহিদুল ইসলাম জানান ইতিমধ্যে পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে ফগার মেশিনের মাধ্যমে ধোয়া দিয়ে মশা নিধনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে পৌরসভার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিভাগ।
তবে মশা নিধনে অতিশীঘ্রই ব্যাক্তি উদ্যোগে ব্যাবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র সৌরভ দাশ শেখর,তিনি জানান পৌরসভা নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে,বর্তমানে মশার উপদ্রুপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসাধারণের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে পৌরসভা মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করবে।তবে ব্যাক্তি উদ্যোগে নিজ ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন এই পৌর কাউন্সিলর।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জেলায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু রুগির সংখ্যা তুলনামূলক বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত জেলায় মোট ডেঙ্গু রুগি সনাক্ত হয়েছে ৫৭৬ জন,যার মধ্যে সদর ও উপজেলা মিলিয়ে ১৮৮ জন,রোয়াংছড়ি ১৬২,রুমা ৪৬,থানছি ২৪,লামা ৫,আলিকদম ১৪৪,নাইক্ষ্যংছড়ি ৩ জন ডেঙ্গু রুগি আছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন এর পরিসংখ্যান বিভাগ এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনি ৭-৮ জন নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ বষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ নিহাররঞ্জন নন্দী বলেন পার্বত্য বান্দরবানে এ বছরে ক্লাসিক ডেঙ্গু রুগির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।এ রোগের উপসর্গ হলো তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভুত হয়। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয় তাছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথাও অনুভব হয়।
তিনি আরো বলেন সাধারণ যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের জেলা ও উপজেলা গুলোর সাস্থ্যকেন্দ্র আসছেন আমরা তাদেরকে চিকিৎসা প্রদানের ব্যাবস্থা করছি এছাড়াও রুগিকে বাসায় থেকে কিভাবে সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করবে সে ব্যাপারেও আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন পরামর্শ দিচ্ছেন।
তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি সবচেয়ে বেশি,তাই রোয়াংছড়ি ও আলিকদম উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাদের চিকিৎসা সেবা কিভাবে দ্রুত জনসাধারণের মাঝে পৌছে দেয়া যায় সেদিকে আমরা জোর দিচ্ছি।ডেঙ্গু এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে উল্লেখ করে জেলা সিভিল সার্জন বলেন পৌরসভা ও ইউনিয়ন গুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি গন যদি মশক নিধনে আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেন তাহলে ভালো হয়।
ডেঙ্গুর চিকিৎসার বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ নিহাররঞ্জন নন্দী বলেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে। যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়।
করণীয় নির্দেশনা –
• সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।
• যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
• খেতে না পারলে দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে।
• জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল-জাতীয় ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট। এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ব্যথার ওষুধ কোনোক্রমেই খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে।
• জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।
সাধারণ মানুষের মাঝে ডেঙ্গু আতংক কমাতে এখুনি পৌরসভা এবং ইউনিয়ন গুলোতে মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ তাহলেই সম্ভব ডেঙ্গু প্রতিরোধ।
রামগড়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন জেলা প্রশাসক।
আপনার মতামত লিখুন :