জোড়াতালিতে চলছে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ০৭/০৫/২০২৩, ৮:৫৮ AM / ৬৬
জোড়াতালিতে চলছে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নিজস্ব প্রতিবেদক।

জনবল সংকটে হুমকির মুখে স্বাস্থ্যসেবা!

 

লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও দক্ষ জনবলের অভাবে রোগীরা পাচ্ছেন না তাদের কাঙ্খিত সেবা। ২০১৭ সালে হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও মেলেনি ৫০ শয্যার জনবল।

ফলে লোকবল সংকটের কারণে কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সরা চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালটিতে ১ম শেণি পদে ৭টি, ২য় শ্রেণি পদে ২১টি, ৩য় শ্রেণি পদে ২৪টি এবং ৪র্থ শ্রেণি পদে ৪টি পদ সহ মোট ৫৬টি পদ শূণ্য রয়েছে।

এখানে প্রথম শ্রেণির ২১টির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৭টি পদ দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে এবং ১৪ জনের মধ্যে ৪ জন ডাক্তার গত সাত মাসের অধিক সময় ধরে বান্দরবান জেলা সদর সহ অন্যান্য হাসপাতালে সংযুক্তিতে রয়েছেন। কবে পরিপূর্ণ জনবল মিলবে তা-ও সঠিকভাবে বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। স্বাধীনতার আগে ১৯৬৪ সালে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০ শয্যা হাসপাতাল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৭ সালে হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সেই থেকে দীর্ঘ ৬ বছর আগের জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক, নার্স, যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে ঠিকমত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। দীর্ঘদিন যাবৎ শিশু, সার্জারি, চর্ম ও যৌন কনসালটেন্ট নেই। প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচারের উপায় নেই এখানে। কাগজে কলমে ২টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলে পুরাতন একটি এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে চলছে জরুরি রোগী পরিবহনের কাজ। লোকবলের সংকটে ব্যবহার না করায় ৩টি এক্সরে মেশিনের মধ্যে ২টি ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। ৬টি ইসিজি মেশিনের মধ্যে ৪টি মেশিন নষ্ট, ২টি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও দক্ষ জনবল না থাকায় ব্যবহার না করতে করতে নষ্ট হচ্ছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ ডেন্টাল ইউনিট থাকলেও জনবল পদায়ন না থাকায় ডেন্টাল কার্যক্রম বন্ধ আছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জানুয়ারি ২০২৩ মাসের এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের ২১টি অনুমোদিত ডাক্তারের পদে আছেন ১৪ জন। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অফথামোলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক), জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) পদ দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে।

এদিকে প্রথম শ্রেণির ১৪ জনের মধ্যে ৪ জন অন্য হাসপাতালে সংযুক্তিতে থাকায় আরো শূণ্যতা তৈরি হয়েছে। ডা. মোহাম্মদ শাহবাজ জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) গত ৩ মাস ধরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে, ডা. ফারজানা রুবাইয়াত (মেডিকেল অফিসার) ৭ মাস ধরে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল চট্টগ্রাম, ডা. অসীম বড়ুয়া (মেডিকেল অফিসার) ৭ মাস ধরে আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ডা. জেনিফার শহীদ (মেডিকেল অফিসার) ৬ মাস ধরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে সংযুক্তিতে রয়েছেন।

এখানে ৩২ নার্সের পদ থাকলেও রয়েছেন ১৩ জন। শূন্য আছে ১৯টি পদ। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ২টি পদে ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি) ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিওথেরাপি) ১টি পদ শূণ্য রয়েছে। আরো পদ শূণ্য আছে, কম্পিউটার অপারেটর ১টি, প্রধান সহকারী ১টি, হেলথ এডুকেটর ১টি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১টি, স্টোর কীপার ১টি, কার্ডিওগ্রাফার ১টি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ১টি, স্বাস্থ্য সহকারী ৪৫টি মঞ্জুরিপদে শূণ্য পদ ১১টি, হারবাল সহকারী ১টি, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ১টি, নিরাপত্তা প্রহরী ১টি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ২টি এবং ওয়ার্ড বড় ১টি পদই রয়েছে শূন্য। এত শূণ্যতার মধ্যেও ৩য় শ্রেণির ৪ জন স্বাস্থ্য সহকারী ও ৪র্থ শেণির ১জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংযুক্তি হিসাবে অন্য হাসপাতালে রয়েছে ১৪ বছরের অধিক সময় ধরে।

চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট সংকটের কারণে পাহাড়ের দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগী সাধারণ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। লামা উপজেলা, আলীকদম উপজেলার একাংশ এবং চকরিয়া উপজেলা বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন সহ প্রায় ২ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নেয় এই হাসপাতাল থেকে। লামা পৌরসভার কলিঙ্গাবিল গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আউট ডোরে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় ডাক্তার দেখানোর জন্য। কোনো কোনো দিন হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাই। হাসপাতালে অনেক যন্ত্রপাতি আছে, শুধু টেকনোলজিস্ট না থাকার কারণে অনেক পরীক্ষা করা যায়না।’

হাসপাতালের অফিস সহকারী আব্দুস সাত্তার জানান, আমরা প্রতি মাসেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় লোকবলের চাহিদা দিচ্ছি কিন্তু পূরণ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জেসমিন আকতার (এমওডিসি) জানান, ‘প্রচুর লোকবল সংকট রয়েছে। বান্দরবান জেলার সবচেয়ে বেশি লোকজনের বসবাস এই উপজেলায়। ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় নার্স-কর্মচারীর চাহিদা প্রতি মাসেই আমরা দিয়ে থাকি কিন্তু পাচ্ছি না। তবু আমরা রোগী সাধারণের চাহিদা মাথায় রেখে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

বান্দরবান সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে আমরা কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছি না; কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রয়োজনীয় জনবলের চাহিদা দেয়া আছে। হয়তো শিগগিরই একটা সুব্যবস্থা হবে।

 

 

 

 

আরো পড়ুন –

 

 

 

গাছে গাছে লিচুর সমারোহরাঙ্গামাটি বিনা মূল্যে ৩৫৮ পরিবারে মাঝে সোলার বিতরন