বান্দরবানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টার নেপথ্যে সন্ত্রাসী গ্রুপ


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ২২/০৩/২০২১, ৭:৩৭ PM / ১৩৫
বান্দরবানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টার নেপথ্যে সন্ত্রাসী গ্রুপ

বান্দরবানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে- চন্দ্রপাহাড়ে পর্যটনবান্ধব প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় উপজাতি সন্ত্রাসী গ্রুপ উস্কানি দিচ্ছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তারা ফায়দা লোটার চেষ্টায় ব্যস্ত। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরীহ ও সহজ-সরল উপজাতিদের দিয়ে জোর করে প্রতিবাদ সমাবেশ করানো হচ্ছে। আর তাদের প্রতিবাদ সমাবেশের ব্যানারে ইংরেজি অক্ষরে নানা স্লোগান তুলে ধরা হচ্ছে। পরে ওইসব ব্যানারের ছবি তুলে পাঠানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। মূলত দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ওই সন্ত্রাসী গ্রুপটি তৎপর।

এদিকে আরেকটি গোয়েন্দা রিপোর্টে বান্দরবানের পরিস্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে- সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এটা প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র কিছু অসাধু, স্বার্থান্বেষী ও সুবিধাভোগী চক্র নিজেদের অনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বিভিন্ন প্রকার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

নৈতিকতা বিবর্জিত এ সকল মহলের কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। সহজ সরল ম্রো জনগোষ্ঠী যাতে অগ্রসর হতে না পারে, চিরদিন যেন ঐ সকল কুচক্রী মহলের আজ্ঞাবহ হয়ে জীবনযাপন করে এটাই তাদের অপপ্রচার এর মূল উদ্দেশ্য।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যখন শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নসহ পাহাড়ি এলাকায় উন্নয়ন ও সম্প্রীতি স্থাপন করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে তখনই এ অসাধু চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাই উন্নয়নের স্বার্থে এখনই এদের প্রতিহত করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে দেশের সুশীল সমাজসহ বান্দরবান জেলার পাহাড়ি বাঙালিসহ সকল শ্রেণির পেশার মানুষকে। উন্নয়নের স্বার্থে এ সকল কুচক্রী মহলকে জাতীয়ভাবে বর্জন করা এখন সময়ের দাবি।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবানের চন্দ্রপাহাড়কে প্রকৃতি যেন তার আপন হাতে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ করেছে। এই পাহাড়ে দাঁড়ালে দেখা যায় উপরে বিস্তৃত নীল আকাশ আর নিচে সবুজের গালিচা। দৃষ্টিনন্দন এই পাহাড়ে আন্তর্জাতিকমানের রিসোর্ট নির্মাণ হলে তা এই এলাকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করবে। যথাযথ পরিকল্পনা করে এই এলাকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করতে পারলে দেশীয় পর্যটকদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ হতে প্রচুর পর্যটক আসবে। একই সঙ্গে স্থানীয় ম্রো সম্প্রদায়ের জনগণও এর সুফল ভোগ করবে। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য ন্যায্যমূল্যে আগত পর্যটকদের নিকট বিক্রি করে লাভবান হবেন এবং তাদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে।

ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নানা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু সরজমিনে দেখা যায় যে, ম্রো জনগোষ্ঠী অত্যন্ত নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির। এ প্রেক্ষিতে, প্রশাসন তথা সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে কোনো রূপ ভয়ভীতি প্রদর্শনের নজির খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে যে প্রতিবাদগুলো ম্রোদের বলে প্রচার করা হচ্ছে তার সবগুলোই বরং বিভিন্ন কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক তাদের অসাধু স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ম্রো জনগোষ্ঠীকে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনের মাধ্যমে সংগঠিত করেছে।

সেনাবাহিনী ম্রোদের কল্যাণে আলীকদম উপজেলায় একটি মুরং হোস্টেল পরিচালনা করছে। এ ছাড়াও, জেলা পরিষদের সহায়তায় বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক এলাকায় একটি ম্রো হোস্টেলসহ বিশেষ স্কুলের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে আত্মসমর্পণকৃত মুরং বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসন এবং তাদের নামে থাকা বিভিন্ন মামলা হতে অব্যাহতির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে হোটেলের প্রয়োজনে ২০ একর জমি নেয়ার কথা বলা হলেও কার্যত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সীমানা খুঁটি স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। সরজমিনে দেখা যায় যে, শুধু ২০ একর জায়গার চারপার্শ্বে সীমানা খুঁটি স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

আরো উল্লেখ্য যে, ২০ একর জায়গার অতিরিক্ত কোনো স্থান বর্তমান প্রকল্পের আওতাধীন নয় এবং ভবিষ্যতেও গ্রহণ করা হবে না। বান্দরবান সেনা রিজিয়নের সঙ্গে বান্দরবান জেলা পরিষদের সম্পাদিত চুক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ২০ একর জায়গা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪০ বছরের জন্য বন্দোবস্ত নেয়া হয়েছে যেখানে সেনাবাহিনীর নিজস্ব প্রয়োজনে কোনো স্থাপনা নির্মিত হবে না। বন্দোবস্তটি শান্তিচুক্তি ১৯৯৭ এর ৬৪ (ক) ধারা মোতাবেক নিয়ম মেনে করা হয়েছে।

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, সেনাবাহিনী কর্তৃক স্থানীয় অধিবাসীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন তথা দেশের পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বান্দরবান জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশ ও স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে চন্দ্রপাহাড়ে একটি বিশ্বমানের রিসোর্ট নির্মাণের জন্য আর এন্ড আর হোল্ডিং লিমিটেড এবং আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবে সদর দপ্তর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১২ই জুন একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ২০ একর ৩য় শ্রেণির জমি পর্যটন কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনার নিমিত্তে বান্দরবান সেনা রিজিয়ন এর অনুকূলে লিজ প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর বান্দরবান জেলা পরিষদ চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তিতে বর্তমান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী স্থাপনা নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট ভূমি উন্নয়নে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না। পর্যটন শিল্প বিকাশে জনস্বার্থ পরিপন্থি কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ এবং স্থানীয় উপজাতিদের জীবনযাপন ও আচরণ বিঘ্নিত করে, এরূপ কার্যক্রম চুক্তির আওতাভুক্ত করা হয়নি।

পর্যটন শিল্প পরিচালনায় ও ব্যবস্থাপনায় জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বর্তমানে ওই স্থানে একটি উন্নতমানের হোটেল নির্মাণের কার্যক্রম চলমান। পাহাড়ের সৌন্দর্য ও প্রকৃতি ঠিক রেখে উন্নত নির্মাণ শৈলীর আদলে রিসোর্ট তৈরি করা হবে। উক্ত জায়গাটিতে কোনো রাস্তাঘাট, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ তথা কোনো নাগরিক সুবিধা নেই। উক্ত এলাকাতে এমনকি কোনো মানুষ বসবাস করে না। ওই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলে পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।

বর্তমানে চন্দ্রপাহাড় রিসোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের নিমিত্তে ইতিমধ্যে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, প্রয়োজনীয় রাস্তাসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রকল্প এলাকায় সরবরাহ করা হয়েছে।

সূত্র: মানবজমিন