বিশেষ প্রতিবেদন,মোঃ শহীদুল ইসলাম ।
বান্দরবানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পিছিয়ে পড়া নারীদের জীবনমান উন্নয়ন ও আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি করে বান্দরবানের গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ে বসবাসরত নারীরা দিনবদলের সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখছেন।
পার্বত্য বান্দরবানের পথে প্রান্তরে ঘুরলেই দেখা মিলবে পাহাড়ের খাজে খাজে অজস্র কলাগাছ,আর এই কলাগাছি পাল্টে দিয়েছে পাহাড়ের নারী উদ্যোক্তাদের জীবন চিত্র।কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক সব শিল্পকর্ম।
ফল ঘরে তোলার পর কেটে ফেলা এসব কলা গাছের বাকল থেকে তৈরি করা হচ্ছে মশ্রিন সুতা,আর এই সুতা দিয়েই তৈরি হচ্ছে ফ্লোর মেট,ব্যাগ,ফুলদানি,মাথার ক্যাপ সহ নানা ধরনের হস্ত শিল্প।জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিবেশ বান্ধব এই প্রকল্পে প্রায় ১৫০ জন নারী উদ্যোক্তাকে দেয়া হয়েছে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ।
প্রশিক্ষিত নারী উদ্যোক্তাদের অনেকেই জানান প্রশিক্ষণ গ্রহনের পর তাদের উৎপাদিত হস্তশিল্পের এসব পন্যের স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।এছাড়াও ইতিমধ্যে অনেক নারী উদ্যোক্তার সাথে যোগাযোগ করেছেন রপ্তানিকারকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও স্বল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভের আশায় বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের আমতলী পাড়ার ৮৮ পরিবার এখন কলাগাছের বাঁকল থেকে ফাইবার বা সুতা তৈরিতে ব্যস্ত। এ প্রকল্পের আওতায় রাজবিলা ইউনিয়নের খামাদং পাড়ার ৪৪ পরিবারকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়াল্ডভিশন, উদ্দীপন, গ্রাউস উদ্দোক্তাদের মেশিন সরবরাহ সহ কারিগরি সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন।
বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়নের আমতলী পাড়ায় এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।
তিনি বলেন পার্বত্য বান্দরবানের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য এই প্রকল্পটি ভূমিকা রাখছে।তিনি জানান, গ্রামীণ নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এই প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ প্রকল্পের কাঁচামালের সহজলভ্যতা হওয়ায় উদ্যোক্তারা সহজে তা সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে।
জেলা প্রশাসক জানান, পাইলটিং ভিত্তিতে এই প্রকল্পটি সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের আমতলী পাড়া ও রাজবিলা ইউনিয়নের খামাদং পাড়ায় পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের সাফল্য ও উদ্যোক্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে পরবর্তীতে বান্দরবানে ব্যাপক আকারে তা সম্প্রসারণ করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি কলাগাছ থেকে কমপক্ষে ২০০ গ্রাম সুতা উৎপাদন করা যায়। সেই হিসেবে পাঁচটি কলাগাছ থেকে ১ কেজি সুতা উৎপাদন করা সম্ভব। যেসব পরিবার এই প্রকল্পে সরাসরি জড়িত থাকবে না তারাও উৎপাদনকারীর কাছে কলা গাছ বিক্রির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় কলা গাছের প্রাচুর্য রয়েছে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য এনজিওদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় কলা গাছ থেকে ফাইবার তৈরির বিষয়টি আমার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বান্দরবানে পাইলটিং প্রকল্প হিসেবে কলা গাছের তন্তু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রাম সমীক্ষা শুরু করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং গ্রাউস, প্রাথমিকভাবে ৬৩টি গ্রামের ওপর সমীক্ষা করে এ প্রকল্পের জন্য ৯টি পাড়া ও গ্রামকে নির্বাচন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে ।
তিনি আরো বলেন, যেসব পরিবার এ প্রকল্পে সরাসরি জড়িত থাকবে না তারাও উৎপাদনকারীর কাছে কলাগাছ বিক্রির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে পার্বত্য বান্দরবানে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিত্যাক্ত কলা গাছের সুতা হতে উৎপাদিত হবে সৌখিন জিনিসপত্র।
যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থাও করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে,প্রশিক্ষিত নারী দক্ষ জনশক্তি কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি এই শিল্প অবদান রাখবে দেশের অর্থনীতিতে।
নিজেদের তৈরী হস্তশিল্পের চাহিদা দেশের প্রান্ত ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে আয় হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।
আপনার মতামত লিখুন :