বান্দরবানের টংকাবতি ইউনিয়নে দিনে গাছ ও রাতে পাথর পাচারের মহোৎসব


জয় বাংলা নিউজ প্রকাশের সময় : ২৮/০১/২০২২, ৯:৪১ PM / ১৮
বান্দরবানের টংকাবতি ইউনিয়নে দিনে গাছ ও রাতে পাথর পাচারের মহোৎসব

মোঃ শহীদুল ইসলাম রানা, বান্দরবান সংবাদ দাতা:
বান্দরবান টংকাবতী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায়  প্রশাসনের লোকচক্ষুর অন্তরালে  দিনে গাছ রাতে পাথর পাচারের মহোৎসব চলছে।

প্রথম দিকে পাচারের কাজে ব্যবহৃত রাস্তা গুলো দেখলে  মনে হবে বিশাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য পাহাড়ের মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। কারন পাহাড় কেটে, দক্ষিণ হাঙ্গর খালে বিভিন্ন জায়গা বাঁধ দিয়ে বিশাল রাস্তা তৈরী করা হয়েছে।

জেলার সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বলি পাড়া এলাকাটি সুয়ালক- লামা রোড থেকে আনুমানিক ৪কিলোমিটার দুরত্বে,পাহাড়ি  দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক ভাবেই দক্ষিণ হাঙ্গর খাল এর শাখা দেবতা ঝিড়ি ও বাদাম্যা ঝিড়ি তে বিপুল পরিমাণ পাথর মজুদ আছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন এইসমস্ত এলাকা থেকে অবৈধবাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে এবং জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের অনুমতি পত্র জোত পারমিট ছাড়া হাতি দিয়ে গাছ টানা হয় প্রতি নিয়ত।নাম না প্রকাশ করার সুত্রে স্থানীয়রা জানান দিনের বেলা গাছ ও রাতে পাথর বোঝাই ট্রাক পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম জেলা লোহাগাড়া উপজেলায় পাচার করা হয়।

অনিয়মিত ভাবে বনাঞ্চলের গাছ কাটা ও পাথর উত্তোলনের ফলে যেমনি ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয় তেমনি অবৈধ ভাবে প্রকৃতিক সম্পদ পাচারের ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দক্ষিণ হাঙ্গর খাল গেঁষে পাহাড় কেটে খালে ছোট বড় ১৪টি বাঁধ দিয়ে প্রায় ৪কিলোমিটার জুরে বিশাল রাস্তা করা হয়েছে শুধু গাছ আর পাথর পরিবহন করার জন্য। পুরো রাস্তাজুরে পাথরের স্তুপ আর গাছের স্তুপ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন দিনে গাছ আর রাতে পাথর পাচার করা হয় ট্রাকে ভরে।

শ্রমিক রুহুল কাদের ও আব্দুর রহিম নামে দুজন শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা চকরিয়া ও লোহাগাড়া থেকে ৮জন শ্রমিক এসেছে গাছ কাটার জন্য। পাথরের স্তুপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানেন না বলে জানিয়েছেন। এই শ্রমিকরা আরো বলেন দুইটি হাতি দিয়ে পাহাড় থেকে গাছ টানা হয়। মান্নান ও কুতুব নামের দুইজন হাতির মাহুত আছে বলে জানায়।

বলি পাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেংরাও ম্রো বলেন ৬-৭দিন ধরে কিছু শ্রমিক গাছ কাটে আর পাথর উত্তোলন করতেছে। গাছ দিনে আর রাতে পাথর ট্রাকে ভরে নিয়ে যায়।  বলি পাড়া কার্বারী দনরুই ম্রো বলেন এই পাড়ায় ২৭টি ম্রো পরিবার রয়েছে,  পাড়ার ৮টি পরিবার প্রধানমন্ত্রী উপহার ঘর পেয়েছে এই সব ঘর নির্মাণ করতে গাড়ি দিয়ে গতবছর ইট নিয়ে আসার কথা বলে আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি রাস্তা তৈরী করেছিলেন এখন সেই রাস্তা দিয়ে গাছ,পাথর টানা হচ্ছে।

দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজার হেডম্যান পাইরিং ম্রো বলেন আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তির নিকট  নিজের বাগানের গাছ বিক্রি করেছেন,জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের অনুমতি নেওয়া রহিম সওদাগরের  দায়িত্ব ছিল।  আর পাহাড় কেটে রাস্তা করে পাথর  উত্তোলন করে পাচার সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

টংকাবতী ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাংয়ং ম্রো বলেন গত বছর রঞ্জুপাড়া থেকে বলিপাড়া পর্যন্ত বুলডোজার দিয়ে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরী করা হয়েছে,  এত বড় রাস্তা দেখলে মনে হবে কোন সরকারী উন্নয়ন সংস্থার কাজ! কিন্তু অবৈধ গাছ ও পাথর নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন ব্যবসায়ী এই রাস্তা অবৈধভাবে কেটেছে।

মোঃ আব্দুর রহিম প্রকাশ রহিম কোম্পানীকে অবৈধ গাজ কাটা ও পাথর উত্তোলন, পাহাড় কেটে, খালে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বীকার করে তিনি বলেন স্থানীয়দের সুবিধার্থে রাস্তাটি করেছি, পাড়াবন বা সংরক্ষিত বন থেকে গাছ কাটা হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন। সিলেট থেকে আনা  ২টি হাতি দিয়ে গাছ টানছেন তবে  শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন করার কথা অস্বীকার করেন।

এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বনবিভাগের টংকাবতী রেঞ্জ কর্মকর্তা মঈনুদ্দিন বলেন আমরা খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি এবং অবৈধভাবে পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা গাছ আটক করেছি এর সাথে জারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে যথাযত ব্যাবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।